ঢাকা,শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

কোটা নিয়ে রণক্ষেত্র শাহবাগ

লাঠিচার্জ টিয়ারগ্যাসে আহত অর্ধশতাধিক, অবরোধ ঢাকার বাইরেও

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ::  সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধকারীদের ওপর দফায় দফায় লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ৮টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে অবস্থানকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপে অর্ধশতাধিক আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। আশংকাজনক অবস্থায় একজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ১০ জনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। এ হামলার প্রতিবাদে আজ থেকে সারা দেশে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাসের কারণে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে সরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নেয়। চারুকলার সামনে কাঁদুনে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলনকারীরা আগুন জ্বালান। পরে তারা মিছিলসহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে আসেন। এরপর সেখানে আবারও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এদিকে পুলিশের হামলার পরে আন্দোলনকারীরা ঢাবির টিএসসিতে এলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানসহ কয়েকজনের ওপর হামলা করেন। হামলায় আটজন আন্দোলনকারী আহত হন। হামলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করছিলেন। আমরা তাদের চলে যেতে বলেছি। হামলার বিষয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে ও কয়েকজনকে আটক করেছে। হামলায় অন্তত ১০০ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করে এর প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। এর আগে চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ৩টায় পদযাত্রা কর্মসূচির মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অবরোধের ফলে শাহবাগ হতে মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, দোয়েল চত্বর, সাইন্সল্যাবমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যাত্রীদের। সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। এর আগে বেলা ২টায় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। অন্তত দুই হাজার আন্দোলনকারী পদযাত্রা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্য দিয়ে নীলক্ষেত হয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। পুলিশ তাদের কয়েক দফা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন এবং তাদের ওপর হামলা হলেও তারা স্থান ত্যাগ না করবেন না বলে জানান। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড বহন করে। এতে লেখা ছিল— ১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৈষম্য থাকবে না, জেগেছে তরুণ জেগেছে দেশ কোটামুক্ত বাংলাদেশ, কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক ইত্যাদি। আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন জানান, দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অহিংস আন্দোলন-অবরোধ চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা চাই দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত করবেন। কোটা কত শতাংশ রাখা যায় তারা এর জন্য একটা কমিশন গঠন করবেন। এটাই আমাদের মূল দাবি। সংসদ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, অবিলম্বে সরকারি চাকরিসহ সব ধরনের চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। কোটা প্রথার সংস্কার ছাড়া আন্দোলনকারীরা রাজপথ ছাড়বে না। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবিগুলো হলো— কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ ভাগ থেকে ১০ ভাগে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা এবং চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাবি শাখার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের পর মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা ৩টা ৪৫ থেকে ৪টা ২০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী এই অবরোধে নবীনগর থেকে সাভার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অসংখ্য গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে। ৩৫ মিনিট অতিবাহিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও ছাত্রলীগের সেক্রেটারির উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

পাঠকের মতামত: